বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা – লেখক: মাইকেল মধুসূদন দত্ত
‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা’ কাব্যাংশটুকু মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধকাব্য’ নামক মহাকাব্যের ‘বধো’ নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে নেয়া হয়েছে। এ কবিতায় মাতৃভূমির প্রতি রাবণের জ্যেষ্ঠ পুত্র মেঘনাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং রাবণের ছোট ভাই বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে সুগভীর ঘৃণা প্রকাশিত হয়েছে।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
“এতক্ষণে”-অরিন্দম কহিলা বিষাদে,
“জানিনু কেমনে আসি লক্ষ্মণ পশিল
রক্ষপুরে! হায়, তাত, উচিত কি তব
এ কাজ? নিকষা সতী তোমার জননী!
সহোদর রক্ষঃশ্রেষ্ঠ! শূলিশম্ভুনিভ
কুম্ভকর্ণ! ভ্রাতৃপুত্র বাসববিজয়ী!
নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে?
চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে?
কিন্তু নাহি গঞ্জি তোমা, গুরুজন তুমি
পিতৃতুল্য। ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে,
পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে,
লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে।”
উত্তরিলা বিভীষণ, “বৃথা এ সাধনা,
ধীমান্। রাঘবদাস আমি; কী প্রকারে
তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব, রক্ষিতে
অনুরোধ?” উত্তরিলা কাতরে রাবণি;-
“হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে!
রাঘবের দাস তুমি? কেমনে ও মুখে
আনিলে এ কথা, তাত, কহ তা দাসেরে!
স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে;
পড়ি কি ভূতলে শশী যান গড়াগড়ি
ধূলায়? হে রক্ষোরথি, ভুলিলে কেমনে
কে তুমি? জনম তব কোন মহাকুলে?
মূলরচনা-২
.
কে বা সে অধম রাম? স্বচ্ছ সরোবরে
করে কেলি রাজহংস পঙ্কজ-কাননে
যায় কি সে কভু, প্রভু, পঙ্কিল সলিলে,
শৈবালদলের ধাম? মৃগেন্দ্র কেশরী,
কবে, হে বীরকেশরী, সম্ভাষে শৃগালে
মিত্রভাবে? অজ্ঞ দাস, বিজ্ঞতম তুমি,
অবিদিত নহে কিছু তোমার চরণে।
ক্ষুদ্রমতি নর, শূর, লক্ষ্মণ; নহিলে
অস্ত্রহীন যোধে কি সে সম্বোধে সংগ্রামে?
কহ, মহারথী, এ কি মহারথীপ্রথা?
নাহি শিশু লঙ্কাপুরে, শুনি না হাসিবে
এ কথা! ছাড়হ পথ; আসিব ফিরিয়া
এখনি! দেখিব আজি, কোন্ দেববলে,
বিমুখে সমরে মোরে সৌমিত্রি কুমতি!
দৈব-দৈত্য-নর-রণে, স্বচক্ষে দেখেছে,
রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, পরাক্রম দাসের! কী দেখি
ডরিবে এ দাস হেন দুর্বল মানবে?
নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রগল্ভে পশিল
দম্ভী; আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে।
তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে
বনবাসী! হে বিধাতঃ নন্দন-কাননে
ভ্রমে দুরাচার দৈত্য? প্রফুল্ল কমলে
কীটবাস? কহ তাত, সহিব কেমনে?
.
মূলরচনা-৩
হেন অপমান আমি,-ভ্রাতৃ-পুত্র তব?
তুমিও, হে রক্ষোমণি, সহিছ কেমনে?”
মহামন্ত্র-বলে যথা নরশিরঃ ফণী,
মলিনবদন লাজে, উত্তরিলা রথী
রাবণ-অনুজ, লক্ষি রাবণ-আত্মজে;
“নহি দোষী আমি, বৎস; বৃথা ভর্ৎস মোরে
তুমি! নিজ কর্ম-দোষে, হায়, মজাইলা
এ কনক-লঙ্কা রাজা, মহিলা আপনি!
বিরত সতত পাপে দেবকুল; এবে
পাপপূর্ণ লঙ্কাপুরী; প্রলয়ে যেমতি
বসুধা, ডুবিছে লঙ্কা এ কালসলিলে!
রাঘবের পদাশ্রয়ে রক্ষার্থে আশ্রয়ী
তেঁই আমি। পরদোষে কে চাহে মজিতে?”
রুষিলা বাসবত্রাস! গম্ভীরে যেমতি
নিশীথে অম্বরে মন্দ্রে জীমূতেন্দ্র কোপি,
কহিলা বীরেন্দ্র বলী,- “ধর্মপথগামী,
হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে
তুমি;- কোন্ ধর্ম মতে, কহ দাসে, শুনি,
জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি, – এ সকলে দিলা
জলাঞ্জলি? শাস্ত্রে বলে, গুণবান্ যদি
পরজন, গুণহীন স্বজন, তথাপি
নির্গুণ স্বজন শ্রেয়ঃ, পরঃ পরঃ সদা!
এ শিক্ষা, হে রক্ষোবর, কোথায় শিখিলে?
কিন্তু বৃথা গঞ্জি তোমা! হেন সহবাসে,
হে পিতৃব্য, বর্বরতা কেন না শিখিবে?
গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।”
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার ব্যাখ্যাঃ
‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা’ কাব্যাংশটুকু মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র ‘বধো’ (বধ) নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছে। সর্বমোট নয়টি সর্গে বিন্যস্ত ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র ষষ্ঠ সর্গে লক্ষ্মণের হাতে অন্যায় যুদ্ধে মৃত্যু ঘটে অসমসাহসী বীর মেঘনাদের।
রামচন্দ্র কর্তৃক দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কা আক্রান্ত হলে রাজা রাবণ শত্রুর উপর্যুপরি দৈব-কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ ও পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদকে পিতা রাবণ পরবর্তী দিবসে অনুষ্ঠেয় মহাযুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে বরণ করে নেন।যুদ্ধজয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার পূর্বেই নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে মনস্থির করে। মায়া দেবীর আনুকূল্যে এবং রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তায়, লক্ষ্মণ শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশে সমর্থ হয়। কপট লক্ষ্মণ নিরস্ত্র মেঘনাদের কাছে যুদ্ধ প্রার্থনা করলে মেঘনাদ বিস্ময় প্রকাশ করে। শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষ্মণের অনুপ্রবেশ যে মায়াবলে সম্পন্ন হয়েছে, বুঝতে বিলম্ব ঘটে না তার। ইতোমধ্যে লক্ষ্মণ তলোয়ার কোষমুক্ত করলে মেঘনাদ যুদ্ধসাজ গ্রহণের জন্য সময় প্রার্থনা করে লক্ষ্মণের কাছে। কিন্তু লক্ষ্মণ তাকে সময় না দিয়ে আক্রমণ করে। এ সময়ই অকস্মাৎ যজ্ঞাগারের প্রবেশদ্বারের দিকে চোখ পড়ে মেঘনাদের; দেখতে পায় বীরযোদ্ধা পিতৃব্য বিভীষণকে। মুহূর্তে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায় তার কাছে। খুল্লতাত বিভীষণকে প্রত্যক্ষ করে দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র মেঘনাদ যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, সেই নাটকীয় ভাষ্যই ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ অংশে সংকলিত হয়েছে। এ অংশে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে প্রকাশিত হয়েছে ঘৃণা।জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও জাতিসত্তার সংহতির গুরুত্বের কথা যেমন এখানে ব্যক্ত হয়েছে তেমনি এর বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রকে অভিহিত করা হয়েছে নীচতা ও বর্বরতা বল।
‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কাব্যাংশটি ১৪ মাত্রায় অমিল প্রবহমান যতিস্বাধীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। প্রথম পঙ্ক্তির সঙ্গে দ্বিতীয় পঙ্ক্তির চরণান্তের মিলহীনতার কারণে এ ছন্দ ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’ নামে সমাধিক পরিচিত। এ কাব্যাংশের প্রতিটি পঙ্ক্তি ১৪ মাত্রায় এবং ৮+৬ মাত্রার দুটি পর্বে বিন্যস্ত। লক্ষ করার বিষয় যে, এখানে দুই পঙ্ক্তির চরণান্তিক মিলই কেবল পরিহার করা হয়নি। যতিপাত বা বিরামচিহ্নের স্বাধীন ব্যবহারও হয়েছে বিষয় বা বক্তব্যের অর্থের অনুষঙ্গে। একারণে ভাবপ্রকাশের প্রবহমানতাও কাব্যাংশটির ছন্দের বিশেষ লক্ষণ হিসেবে বিবেচ্য।
আরও পড়ুনঃ আঠারো বছর বয়স কবিতা – সুকান্ত ভট্টাচার্য।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা pdf । বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা মাইকেল মধুসূদন দত্ত pdf ।Bivisoner proti meghonad pdf ।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা pdf download করুন। বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা মাইকেল মধুসূদন দত্ত pdf download করুন | Bivisoner proti meghonad pdf download করুন। বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা [ Download PDF ]
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা শব্দ ও অর্থঃ
� বিভীষণ-রাবণের কনিষ্ঠ সহোদর। রাম-রাবণের যুদ্ধে স্বপক্ষ ত্যাগকারী। রামের ভক্ত।
� ‘এতক্ষণে’-অরিন্দম কহিলা-রুদ্ধদ্বারা নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষ্মণের অনুপ্রবেশের অন্যতম কারণ যে পথপ্রদর্শক বিভীষণ, তা অনুধাবন করে বিস্মিত ও বিপন্ন মেঘনাদের প্রতিক্রিয়া।
� অরিন্দম-অরি বা শত্রুকে দমন করে যে। এখানে মেঘনাদকে বোঝানো হয়েছে।
� পশিল- প্রবেশ করল।
� রক্ষঃপুরে-রাক্ষসদের পুরী বা নগরে। এখানে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে।
� তাত-পিতা। এখানে পিতৃব্য অর্থে।
� নিকষা-রাবণের মা।
� শূলীশম্ভুনিভ-শূলপাণি মহাদেবের মতো।
� কুম্ভকর্ণ-রাবণের মধ্যম সহোদর।
� বাসবজিয়ী-দেবতাদের রাজা ইন্দ্র বা বাসবকে জয় করেছে যে। এখানে মেঘনাদ। একই কারণে মেঘনাদের অপর নাম ইন্দ্রজিৎ।
� তস্কর – চোর।
� গঞ্জি-তিরস্কার করি।
� রামানুজ-রাম+অনুজ= রামানুজ। এখানে রামের অনুজ লক্ষ্মণকে বোঝানো হয়েছে।
� শামন-ভবনে-যমালয়ে।
� ভঞ্জিব আহবে-যুদ্ধদ্বারা বিনষ্ট করব।
� আহবে-যুদ্ধে।
� ধীমান্-ধীসম্পন্ন। জ্ঞানী।
� রাঘব-রঘুবংশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। এখানে রামচন্দ্রকে বোঝানো হয়েছে।
� রাঘবদাস-রামচন্দ্রের আজ্ঞাবহ।
� রাবণি-রাবণের পুত্র। এখানে মেঘনাদকে বোঝানো হয়েছে।
� স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে-বিধাতা চাঁদকে আকাশে নিশ্চল করে স্থাপন করেছেন।
� বিধু-চাঁদ।
� স্থাণু-নিশ্চল।
� রক্ষোরথী- রক্ষকুলের বীর।
� রথী-রথচালক। রথচালনার মাধ্যমে যুদ্ধ করে যে।
� শৈবালদলের ধাম-পুকুর। বদ্ধ জলাশয়।
� শৈবাল – শেওলা।
� মৃগেন্দ্র কেশরী – কেশরযুক্ত পশুরাজ সিংহ।
� কেশরী – কেশরযুক্ত প্রাণী। সিংহ।
� মহারথী-মহাবীর। শ্রেষ্ঠ বীর।
� মহারথীপ্রথা-শ্রেষ্ঠ বীরদের আচরণ-প্রথা।
� সৌমিত্রি-লক্ষ্মণ। সুমিত্রার গর্ভজাত সন্তান বলে লক্ষ্মণের অপর নাম সৌমিত্রি।
� নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার-লঙ্কাপুরীতে মেঘনাদের যজ্ঞস্থান। এখানে যজ্ঞ করে মেঘদান যুদ্ধে যেত। ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’ যুদ্ধযাত্রার প্রাক্কালে নিরস্ত্র মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা বৈশ্বানর বা অগ্নিদেবের পূজারত অবস্থায় লক্ষ্মণের হাতে অন্যায় যুদ্ধে নিহত হয়।
� প্রগলভে-নির্ভীক চিত্তে।
� দম্ভী-দম্ভ করে যে। দাম্ভিক।
� নন্দন কানন-স্বর্গের উদ্যান।
� মহামন্ত্র-বলে যথা নরশিরঃ ফণী-মন্ত্রপূত সাপ যেমন মাথা নত করে।
� লক্ষি-লক্ষ করে।
� ভর্ৎস-ভর্ৎসনা বা তিরস্কার করছ।
� মজাইলা-বিপদস্ত্র করলে।
� বসুধা-পৃথিবী।
� তেঁই-তজ্জন্য। সেহেতু।
� রুষিলা- রাগান্বিত হলো।
� বাসবত্রাস-বাসবের ভয়ের কারণ যে মেঘনাদ।
� মন্দ্র-শব্দ। ধ্বনি।
� জীমূতেন্দ্র-মেঘের ডাক বা আওয়াজ।
� বলী- বলবান। বীর।
� জলাঞ্জলি-সম্পূর্ণ পরিত্যাগ।
� শাস্ত্রে বলে,পর পরঃ সদা! -শাস্ত্রমতে গুণহীন হলেও নির্গুণ স্বজনই শ্রেয়, কেননা গুণবান হলেও পর সর্বদা পরই থেকে যায়।
� নীচ-হীন। নিকৃষ্ট। ইতর।
� দুর্মতি-অসৎ বা মন্দ বুদ্ধি।
এক নজরে বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোঃ
মেঘনাদ: বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতায় মেঘনাদ প্রধান চরিত্র। কাব্যাংশের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে ফুটে উঠা মেঘনাদ একজন বীর যোদ্ধা এবং নিবেদিত দেশপ্রেমিক। তিনি নিজ মাতৃভূমি, বংশ ও গোত্রের ঐশ্বর্যের বর্ণনার মাধ্যমে এ কবিতার সম্পূর্ণ অংশজুড়ে তাঁর চাচা বিভীষণকে রামের সঙ্গ ত্যাগ করে দেশমাতৃকার দলে যোগ দেয়ার অনুরোধ করেন।
বিভীষণ: মেঘনাদের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিলেন বিভীষণ।দেশপ্রেম এর চেয়ে তার কাছে প্রাধান্য পায় রামের ধর্মদীক্ষা। তাই কাব্যাংশে তাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একজন বিশ্বাসঘাতক এবং দেশদ্রোহী হিসেবে। যিনি রামের দলে যোগ দিয়ে নিজ পরিবারের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেন।
লক্ষ্মণ: চমৎকার এ কবিতায় লক্ষ্মণকে বর্ণনা করা হয়েছে একজন নীচ ও ভীতু যোদ্ধা হিসেবে। যে কিনা বিভীষণের সাহায্য নিয়ে নিরস্ত্র মেঘনাদের উপর হামলা করেন এবং পরিশেষে তাঁকে বধ করেন। একজন বীর যোদ্ধা কখনই তার নিরস্ত্র প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ করতে পারেন। তাই এখানে লক্ষ্মণকে একজন কাপুরুষ, কপট ও নীচ চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
রাম: কাব্যাংশের প্রধান খলনায়ক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে রামকে। তারই ভ্রাতা লক্ষ্মণ মায়া দেবীর আনুকূল্যে শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভীষণের সহায়তায় নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করেন। রামায়ণে রাম যদিও
একজন নায়ক কিন্তু দেশপ্রেমিক লেখকের চোখে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন খলনায়ক।
রাবণ: একজন বীর যোদ্ধা। কাব্যাংশের একটি বিরাট অংশজুড়ে মেঘনাদের মুখে ফুটে উঠে রাবণের প্রশংসা। রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, রাজহংশ এবং মৃগেন্দ্র কেশরীর মতো প্রশংসামূলক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে রাবণের বর্ণনায়।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরঃ
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরঃ
সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : হাজার হজার সৈন্য যুদ্ধক্ষেত্রে পুতুলের মতো দীড়িয়ে থাকে। মোহনলাল ও মিরমর্দান প্রাণপণে যুদ্ধ করেও মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কাছে পরাজিত হয়। ব্রিটিশ সৈন্যরা অনায়াসেই বাংলা দখল করে নেয়। এভাবেই ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন বাংলার স্বাধীনতার অবসান ঘটে।
ক. সৌমিত্রি কে?
খ. “হায় তাত, উচিত কি তব এ কাজ?’ – কে, কেন এ উক্তিটি করেছিল?
গ. উদ্দীপকের মিরজাফর ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে? তুলনামূলক আলোচনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের মূলভাব ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” কবিতার মূলভাবের সাথে আংশিক সামঞ্জস্যপূর্ণ”__ উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
আরও কবিতা পড়ুনঃ বিদ্রোহী কবিতা – লেখকঃ কাজী নজরুল ইসলাম।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : বাবার ব্যবসায় দুর্দিন দেখা দিলে বড় ছেলে বাবার ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষের সাথে হাত মেলায় ভবিষ্যতের আশায়। ছোট ছেলে বাবার ব্যবসায়িক দুর্দিন কাটানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে বড় ভাইকে বাবার পাশে থাকার অনুরোধ করে, কিন্তু বড় ছেলের অভিযোগ – বাবার একগুয়ে মনোভাব আর ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পারিবারিক ব্যবসা ডুবতে বসেছে। তার ব্যর্থতার দায়ভার আমি নেব কেন? বড় ভাইয়ের সমর্থন না পেয়ে সুদিন ফিরিয়ে আনতে একা সংগ্রাম চালিয়ে যায় ছোট ছেলে।
ক. বাসবত্রাস কে?
খ. “লঙ্কার কলঙ্ক আজ ভঞ্জিব আহবে” দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের ছোট ছেলে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” কবিতার কোন চরিত্রের অনুরূপ? কীভাবে?
ঘ. উদ্দীপকের বড় ছেলে এবং ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” কবিতার বিভীষণের আচরণ ভিন্ন উদ্দেশ্যপ্রসূত”- মন্তব্যটি বিবেচনা করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্ধ অন্তমিত হয়েছিল যাদের বিশ্বাসঘাতকতায় তাদের অন্যতম প্রধান সেনাপতি মীরজাফর প্রধান সেনাপতি হয়েও সে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। শুধু মীরজাফরই নয়; রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, উমিাদ, জগৎশেঠও যুদ্ধে চরম অসহযোগিতা করেছে। কিন্তু মোহনলাল ও মীরমর্দান বাঙালি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন এবং জীবন দিয়েছেন। পক্ষান্তরে মীরজাফর এবং তার দোসররা বাঙালি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং জাতিকে প্রায় ২০০ বছর ইংরেজদের গোলামি করতে বাধ্য করেছে।
ক. ‘বিধু” শব্দের অর্থ কী?
খ. “চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে?’_ চরণটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিশ্বাসঘাতকতা ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” বিষয়বস্তু কিভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আংশিক রূপায়ণ মাত্র – তোমার মতামতসহ উক্তিটি বিচার করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : ১৯৭১ সালের _২৫শে মার্চ কালরাতে পাক হানাদার বাহিনী বাংলার নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায় । এতে দখলদার পাক হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল এ দেশীয় দোসর ঘরের শত্রু রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী। যদিও যুদ্ধের নীতিতে নিরস্ত্র মানুষ হত্যা কাপুরুষোচিত।
ক. ‘অরিন্দম’ কে?
খ. ‘স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে’ কথাটি বুঝিয়ে দাও ।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাজাকার, আল-বদর বাহিনী এবং কবিতায় বর্ণিত বিভীষণের ভূমিকার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “নিরস্ত্র মানুষ হত্যা কাপুরুষোচিত’ উদ্দীপক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আলোকে উক্তিটি বিচার করো।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার আরো সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরঃ ক্লিক করুন।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা আবৃতিঃ
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা আবৃতি