একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হল গবেষণা। গবেষণার মাধ্যমেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ধারণ করা যায়। কিন্তু পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র ভিন্ন। প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পার হয়ে গেলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে মানসম্মত গবেষণার সংকট। গত চার বছরে ক্রমান্বয়ে গবেষণায় বাজেট বাড়লেও বাড়ছেনা মানসম্মত গবেষণা। গবেষণায় দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি, রিসার্চ ল্যাব, অবকাঠামোগত সংকট, ফান্ডের সমস্যার কারণে ছাত্র-শিক্ষকরা অনেক ভোগান্তির শিকার হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, গবেষণা প্রকল্প ছিল ১৪৩টি। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, গবেষণা প্রকল্প ছিলো ১৩৩টি। ২০২০-২১ অর্থবছরে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ টাকা, গবেষণা প্রকল্প ছিল ১৪৭টি। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় ব্যায় হয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং প্রকাশনা সংখ্যা মাত্র ৮ টি। যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক কম। এছাড়াও এবছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা সহযোগিতা প্রকল্প ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’ এ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকদের মাত্র ১১টি প্রজেক্ট অনুমোদন পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলিক গবেষণার সংস্কৃতি চালু করতে পারলে গবেষণার মান উন্নত হবে। গবেষণার জন্য গবেষণাবান্ধব পরিবেশ প্রয়োজন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো সেই পরিবেশ গড়ে উঠেনি। তাই অনেক গবেষক ইচ্ছে করলেও গবেষণা করতে পারে না। তবে সম্প্রতি গবেষণা খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য ড. মো. ইমদাদুল হক সেন্ট্রাল সায়েন্স ল্যাবরেটরি তৈরী, গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট দেয়া, বাংলাদেশ বিজ্ঞান, গবেষণা শিল্প পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাথে গবেষণা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর সহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালের গবেষণা সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. পরিমল বালা জানিয়েছেন, আমরা শিক্ষকদের মাঝে যেভাবে গবেষণা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি এতে গবেষনার প্রকল্পের সংখ্যা, গবেষণার কোয়ালিটি সবকিছুই বাড়বে। এবার আমাদের কাছে গবেষণার ১৮৭টি প্রকল্প জমা পড়েছে। আমরা গবেষণার মান বৃদ্ধি জন্য এগুলা বাহির থেকে এক্সট্রার্নাল নিয়ে এসে রিভিউ করিয়েছি। শিক্ষকদের আমরা অভ্যন্তরীণভাবে আরও উৎসাহিত করে যাচ্ছি যাতে তারা গবেষণায় মনোযোগী হয়। এছাড়াও যারা গবেষণা করতে আগ্রহী আমরা তাদের সকল প্রকার সহায়তা করব।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন জানান, বাজেট দিয়ে আসলে গবেষণা হয় না। গবেষণা করতে হলে প্রথমে আমাদের আগ্রহ লাগবে। রিসার্চের জন্য একটা এথিক বোর্ড প্রয়োজন হয়, যা আমাদের নেই। এজন্য আমাদের মানসম্মত গবেষণা হচ্ছে না। তবে আমাদের নতুন উপাচার্য আসার পরে একটা এথিক বোর্ড গঠনের কথা চলছে। এছাড়াও রিসার্চের জন্য যে পরিবেশ বা ল্যাব দরকার তা আমাদের নেই। বাজেট যেহেতু বাড়ছে আমাদের গবেষণার পরিবেশটা ঠিক করার দিকে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। আশা করি সামনে গবেষণা প্রকল্প ও মান দুইটাই বাড়বে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক জানান, আমরা বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে গবেষণা বিষয়ক চুক্তি করার পরিকল্পনা করছি। এছাড়াও গবেষণা বৃদ্ধির জন্য আমরা রিসার্চ সেন্টার তৈরী করছি, গবেষণাঢ বরাদ্দ বাড়িয়েছি এবং বরাদ্দ যাতে সামনের বছর আরো বাড়ে সে পদক্ষেপ নিচ্ছি ।